যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৬ বছর দেশের মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে, তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।
রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সিতে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন জামায়াতের আমিরের সম্মানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল। তারা চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। তিনি বলেন, আমি নিজেও অন্যায় বিচারের একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেপ্তার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি!
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবে। আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া, সাবেক আমিরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪-এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দুহাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, ‘হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি করো’। আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার এমন ত্যাগের বিনিময়েই দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করতে হবে।
শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিতদের আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব দেওয়ায় আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা প্রকাশ করছি আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না। এ সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আপনারা প্রবাসে থেকে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করেছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সাবেক ছাত্রনেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপের পরিচালনায় নাগরিক সংবর্ধনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কমিউনিটি নেতা সিরাজুল ইসলাম শাহীন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মুফতি সদরুদ্দিন, ইসলামিক স্কলার মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ড. হাসনাত হোসাইন এমবিই, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মুসলিম ভয়েসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, মির্জা আসহাব বেগ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাহি ফেরদাউস জলিল, সাংবাদিক রেজা আহমেদ চৌধুরী শুয়েব, লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার সাইফুদ্দিন খালেদ, অলি উল্লাহ নোমান, ইসলামিক স্কলার মাওলানা সাদেকুর রহমান, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, নির্যাতিত সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।