কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল থেকে ১৫০ বছরের পুরোনো বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধারের কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। বন্দরের ৬ ও ৭ নম্বর জেটির মধ্যবর্তী ডাঙ্গারচর এলাকায় নদীর তলদেশে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ওই জাহাজটি।
ইতোমধ্যে কয়লাচালিত ইঞ্জিনের এই জাহাজটির আংশিক উদ্ধার হওয়ায় সেখানে রয়েছে তামা, পিতল ও রূপার তৈরি থালা-বাটি, হাড়ি-পাতিল, গ্লাস, পানির পাত্র, চামচ, বিভিন্ন নকশা করা শৌখিন জিনিসও। এ ছাড়াও রয়েছে মোমবাতিদানি, ফুলের টব, হ্যারিকেন ও কুপিবাতি, হাতির দাঁত, দূরবীনসহ অনেক জিনিসপত্র।
এসব উদ্ধারকৃত জিনিসের ধরন দেখে ধারণা করা যায়, জাহাজটি ব্রিটিশ আমলের। ধারনা করা হচ্ছে, ভারত উপমহাদেশে জাহাজটি বাণিজ্য করতে এসে কর্ণফুলী নদীর এই স্থানে ডুবে যায়। এছাড়া জাহাজটিতে এখনো অনেক কয়লা মজুদ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ৬ ও ৭ নম্বর জেটির মধ্যবর্তী স্থানে খনন কাজ করার সময় ডুবন্ত একটি জাহাজের সন্ধান পায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই জাহাজটি উদ্ধার ও অপসারণ করার জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ হিরামনি স্যালভেজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে তারা জাহাজটি উদ্ধার করে।
হিরামনি স্যালভেজ লিমিটেডের কর্ণধার মো. আবুল কালাম বলেন, বন্দরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমরা এই জাহাজটি উদ্ধার ও অপসারণ করেছি। এ ছাড়াও নদীতে আরও দুটি ডুবন্ত জাহাজ রয়েছে। সেই দুটিও উদ্ধার ও অপসারণে কাজ চলমান রয়েছে। ডুবন্ত জাহাজগুলো অপসারণ করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্ণফুলী চ্যানেল নিরাপদ ও গতিশীল হবে।
জাহাজটির উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সিনিয়র ডুবুরি মো. জহির বলেন, জাহাজটি নদীর তলদেশের ৬০ ফুট গভীরে ছিল। এই জাহাজের কারণে নদীতে পলি জমে চর জেগে উঠেছে। পরে আমরা ড্রেজিং করে জাহাজটি উন্মুক্ত করি। অর্ধেক অংশ উদ্ধারের জন্য ৪টি স্যালভেজ বার্জ নিয়োজিত করি। বার্জের মাধ্যমে উদ্ধার করা অংশটি নদীর তীরে আনার পর আমরা বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখে নিশ্চিত হই এটি ব্রিটিশ আমলের জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন করিদ উদ্দিন বলেন, কর্ণফুলী চ্যানেলে ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারের জন্য আমরা হিরামনি স্যালভেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছি। তারা সম্প্রতি অনেক পুরোনো একটি জাহাজ নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার এবং অপসারণ করেছে।
চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপ-পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ভারতবর্ষে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় তখন রানি ভিক্টোরিয়া এই উপমহাদেশের দায়িত্ব নিজ হাতে নেন ১৮৫৮ সালে। তখন রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন। ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের প্রথম দিকের মুদ্রা এগুলো। হয়তো জাহাজটি আরও পুরোনো।